প্রবন্ধ

হানাদারদের আগ্রাসন মুমিনের আল্লাহপ্রদত্ত বিজয়কে রুখতে পারবে না [মসজিদে নববির জুমার খুতবা (১৭ নভেম্বর ২০২৩)]

লেখক:মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম
২২ নভেম্বর, ২০২৩
৪১৭৮ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

মূলঃ সালাহ বিন মুহাম্মাদ আল-বুদাইর

মসজিদে নববী, মদিনা মুনাওয়ারা

প্রথম খুতবা

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি তাঁর শক্তিতে মহান, যিনি পরাক্রমশালী, যিনি গোপনে ও প্রকাশ্যে বান্দার অবস্থা জানেন, যিনি নির্যাতিতদের আর্তনাদ শোনেন এবং সাহায্য করেন। আমরা ভাগ্যের ভালোমন্দের জন্য তাঁরই প্রশংসা করি, এবং তাঁর সিদ্ধান্তের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তার কোনো শরিক নেই। চমৎকার সব নিদর্শনাবলি একমাত্র তারই :

 

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ تَقُومَ السَّمَاءُ وَالْأَرْضُ بِأَمْرِهِ. [الرُّومِ: 25]

 

অর্থাৎ, এবং তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবীর স্থিতি থাকে। [সুরা রুম : 25]

এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নবি ও পথপ্রদর্শক মুহাম্মাদ সাঃ তাঁর বান্দা ও রাসূল। তিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করেছেন। তাঁর ওপর, তাঁর পরিবার ও সঙ্গীদের ওপর আল্লাহর বরকত ও শান্তি বর্ষিত হোক—যতদিন মেঘ বর্ষণ করে যাবে এবং বসন্ত তার পুষ্পরাজি নিয়ে আগমন করতে থাকবে।

 

হে মুসলিমগণ! সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহকে ভয় করো এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না—যারা বাড়াবাড়ি করে, মন্দ কাজ করে এবং শত্রু ও অভাগাদের  অনুকরণ করে। 

 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ .آلِ عِمْرَانَ: 102

 

অর্থাৎ, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করো এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না।[সুরা আলে ইমরান : 102]

 

হে মুসলিমগণ! সময় হলো বিচরণকারী ঝড়, আহুত বিপর্যয়, শান্তি ও যুদ্ধ, তিক্ততা ও অত্যাচার, সমৃদ্ধি ও দুর্ভিক্ষ। মুমিনের দুঃখ-কষ্ট যতই তীব্র হোক না কেন, বিপদ ও বিপর্যয় যতই দীর্ঘ হোক না কেন, সে বিশ্বাস করে, ভাগ্যের লিখন এড়ানো যায় না, যা স্থিরিকৃত তা ঘটবেই, যা নির্ধারণ করা হয়েছে তা আসবেই, যা লেখা হয়েছে তা-ই প্রতীক্ষিত, আল্লাহর চাওয়াই বাস্তবায়িত হবে এবং তাঁর নির্দেশই সত্য হবে। তার সিদ্ধান্ত কেউ টলাতে পারে না, তিনি না চাইলে কেউ কিছু ঘটাতে পারে না। তিনি দিতে চাইলে কেউ রুখতে পারে না, তিনি না দিলে কেউ অর্জন করতে পারে না। আমাদের রব যা চান তা-ই করেন। সুতরাং কোনো ভয় বা আতঙ্ক নেই, বরং ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং প্রতীক্ষা কাম্য। বিজয় একমাত্র মুসলিম ও মুমিনদেরই হবে। পথভ্রষ্ট আর অত্যাচারীদের সমাপ্তি হবে লাঞ্ছনা ও পরাজয়ে।

 

  [يُوسُفَ: 21].(وَاللَّهُ غَالِبٌ عَلَى أَمْرِهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ)

 

অর্থাৎ, আল্লাহ তাঁর কার্য সম্পাদনে অপ্রতিহত; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।[সুরা ইউসুফ : 21]

 

হে মুসলিমগণ! গাজায় আমাদের ভাইদের ওপর যে দুর্দশা ও বিপর্যয় নেমে এসেছে, তাতে আমাদের হৃদয় দুঃখ-কষ্টে ভারাক্রান্ত। গাজার বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে। তাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত সীমাতিক্রম করেছে। জুলুম কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। অচিরেই তার অবসান ঘটবে। কালচক্র সর্বদায় ঘূর্ণায়মান। অচিরেই অত্যাচারীরা প্রতারণার পরিণতি জানবে। আবু মুসা আশআরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা জালেমকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। তারপর যখন তাকে ধরেন, তখন আর তাকে ছাড়েন না। অতঃপর রাসূল সাঃ নিম্নোক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করেন, 

 

 [هُودٍ: 102] (وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ)

 

অর্থাৎ, এরূপই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি! তিনি শাস্তি দান করেন জনপদসমূহকে যখন এরা জুলুম করে থাকে। নিশ্চয়ই তাঁর শাস্তি মর্মন্তুদ, কঠিন। [সুরা হুদ : 102।’—সহিহ বুখারি ও মুসলিম।

 

হে মুসলিমগণ! অত্যাচারী হানাদাররা নিজেদের সামর্থ্যের সবটা দিয়ে সামষ্টিক প্রতিরোধশক্তি গড়ে তুলেছিল, কিন্তু ধৈর্য এবং বিজয়ে আল্লাহ তাঁর নিপীড়িত বান্দাদেরকে যে সামর্থ্য দান করেছেন—সেক্ষেত্রে তারা ছিল একেবারেই বেখবর। অত্যাচারী যত শক্তিশালীই হোক না কেন, নির্যাতিত যতই দুর্বল হোক না কেন, অত্যাচারী সর্বদাই পরাভূত, লাঞ্ছিত, পরিত্যক্ত ও শৃঙ্খলবদ্ধ এবং জুলুমের পরাজয় সুনিশ্চিত আসন্ন। সবচেয়ে শক্তিশালী তীর হল নিপীড়িতের আর্তনাদ, মুহূর্তেই আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন। আবু হুরায়রা রা.-থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, 

 

ثلاثةٌ لا تُردُّ دعوتُهم: الصَّائمُ حتَّى يُفطرَ، والإمامُ العادلُ، ودعوةُ المظلومِ يرفعُها اللهُ فوق الغمامِ، وتُفتَحُ لها أبوابُ السَّماءِ، ويقولُ الرَّبُّ: وعزَّتي لأنصُرنَّك ولو بعدَ حينٍ" أخرجه أحمد والترمذي، وصححه ابن خزيمة وحسنه ابن حجر

 

অর্থাৎ, তিন ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। রোযাদারের দুআ, যখন সে ইফতার করে, ন্যায়বিচারক শাসকের দুআ এবং অত্যাচারিতের দুআ। তার দুআকে আল্লাহ মেঘের উপর উঠিয়ে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং আল্লাহ বলেন, আমার ইজ্জতের কসম—আমি নিশ্চয় তোমাকে সাহায্য করব, যদিও কিছু সময় পরে হয়।—তিরমিযি।

 

পবিত্র তিনি যিনি নির্যাতিত ও দুস্থদের আর্তনাদ শুনেছেন, নির্যাতিতদের জন্য জায়গা করে দিয়েছেন এবং অত্যাচারীকে করেছেন ভর্ৎসনা, লাঞ্ছনাই জালেমের শেষ পরিণতি।

 

ولا تَعْجَلْ على أحدٍ بِظُلمٍ *** فإنَّ الظلمَ مَرتعُه وخيمُ

 

অর্থাৎ, আর কারও বিরুদ্ধে অন্যায় করতে তাড়াহুড়ো করো না, কারণ অন্যায়ের পরিণতি খুবই ভয়ংকর।

 

হে মুসলিমগণ! অত্যাচারী সর্বদা ঘৃণা, শত্রুতা, হিংসা ও বিদ্বেষের অনুভূতিতে পিষ্ট হতে থাকবে। সে নিরাপদে থাকবে না, শান্তিও পাবে না। সে যতই মিথ্যা আর ছলনার আশ্রয় নিয়ে নিপীড়িত হওয়ার ভান করুক না কেন, তার জীবন কাটবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় এবং বিপদাপদ হবে তার নিত্যদিনের সঙ্গী; কারণ অত্যাচার ঘৃণার চাষ করে আর ‍দুর্ভাগ্যকে টেনে আনে। অপরদিকে অন্যায় প্রাচুর্য কেড়ে নেয় আর অভিশাপ বয়ে আনে।

 

হে মুসলিমগণ! আল্লাহ কখনো কখনো কাফেরদের বস্তুগত প্রাচুর্য দান করেন, কিন্তু বাস্তবে তা প্রাচুর্যের রূপে প্রলোভন এবং অবকাশ মাত্র। আল্লাহ তাআলা বলেন, 

 

[آلِ عِمْرَانَ: 178] (وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ خَيْرٌ لِأَنْفُسِهِمْ إِنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ لِيَزْدَادُوا إِثْمًا وَلَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ)

 

অর্থাৎ, কাফিররা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, আমি অবকাশ দেই তাদের মঙ্গলের জন্যে; আমি অবকাশ দিয়ে থাকি যাতে তাদের পাপ বৃদ্ধি পায় আর তাদের জন্যে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। [সুরা আলে ইমরান : 178]

অন্য এক আয়াতে বলেন, 

 

[الْأَعْرَافِ: 183] (وَأُمْلِي لَهُمْ إِنَّ كَيْدِي مَتِينٌ) 

 

অর্থাৎ, আমি তাদেরকে সময় দিয়ে থাকি; আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।[সুরা আরাফ : 183]

অপর এক আয়াতে বলেন,

 

[الْمُؤْمِنَونَ: 55-56] (أَيَحْسَبُونَ أَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهِ مِنْ مَالٍ وَبَنِينَ * نُسَارِعُ لَهُمْ فِي الْخَيْرَاتِ بَل لَا يَشْعُرُونَ)

 

অর্থাৎ, এরা কি মনে করে যে, আমি এদেরকে সাহায্যস্বরূপ যে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দান করি, তা দিয়ে এদের জন্যে সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, এরা বুঝে না।[সুরা মুমিনুন : 55-56]

 

এ সমৃদ্ধি দুর্যোগ এবং বিপর্যয় দ্বারা পরিপূর্ণ; রোগ, শোক, ভয়, আতঙ্ক এবং অতৃপ্তিই যার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আল্লাহ তাআলা বলেন,

 

[الرَّعْدِ: 31] (وَلَا يَزَالُ الَّذِينَ كَفَرُوا تُصِيبُهُمْ بِمَا صَنَعُوا قَارِعَةٌ أَوْ تَحُلُّ قَرِيبًا مِنْ دَارِهِمْ حَتَّى يَأْتِيَ وَعْدُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيعَادَ)

 

অর্থাৎ, যারা কুফরি করেছে তাদের কর্মফলের জন্যে তাদের বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে, বা বিপর্যয় তাদের আশেপাশে আপতিত হতেই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এসে পড়বে। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।[সুরা রাদ : 31]

 

[آلِ عِمْرَانَ: 196] (لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي الْبِلَادِ)

 

অর্থাৎ, যারা কুফরি করেছে, দেশে দেশে তাদের অবাধ বিচরণ যেন কিছুতেই তোমাকে বিভ্রান্ত না করে।[সুরা আলে ইমরান : 196]

তাদের প্রস্তুতি ও শক্তিমত্তা দ্বারা প্রতারিত হবেন না। তাদের দাম্ভিকতা ও অত্যাচারে ধোঁকায় পড়বেন না।তা দের শক্তি, সামগ্রী ও সরঞ্জামে ভয় পাবেন না।

 

[آلِ عِمْرَانَ: 197] (مَتَاعٌ قَلِيلٌ ثُمَّ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمِهَادُ)

 

অর্থাৎ, এটা স্বল্পকালীন ভোগমাত্র; এরপর জাহান্নাম তাদের আবাস; আর তা কত নিকৃষ্ট ঠিকানা![সুরা আলে ইমরান : 197]

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, 

 

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ فَسَيُنْفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ وَالَّذِينَ كَفَرُوا إِلَى جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ. سورة الأنفال :36 

অর্থাৎ, আল্লাহর পথ হতে লোককে নিবৃত্ত করার জন্যে কাফিররা তাদের ধনসম্পদ ব্যয় করে, তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করতেই থাকবে; তারপর এটা তাদের মনস্তাপের কারণ হবে; এর পর তারা পরাভূত হবে আর যারা কুফরি করে তাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হবে।[সুরা আনফাল : 36]

 

আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনারাও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। হে ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের বিজয় দানকারী, আমাদের  ক্ষমা করুন। 

 

দ্বিতীয় খুতবা

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমি তাঁর মহান দয়ার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তার কোনো শরিক নেই। যারা নিজেদের অসুস্থতায় নিরাশ, তিনি তাদের আরোগ্য দান করেন। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমাদের নবি মুহাম্মাদ সাঃ তাঁর বান্দা ও রাসূল। তাঁর অনুসরণকারী হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত, আর অমান্যকারী ভ্রষ্ট ও ক্ষতির সম্মুখীন। অবিরাম ধারায় সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর, তাঁর পরিবার ও সঙ্গীদের ওপর। 

 

হে মুসলিমগণ! আল্লাহকে ভয় করো, কেননা তাকওয়াই সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বিশ্বস্ত সাহায্যকারী। প্রতিটি বিষয় আল্লাহর জন্য সহজ। সবকিছু তারই মুখাপেক্ষী এবং তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তনশীল। তিনি সবকিছু শুনেন এবং দেখেন। মুসলিমদের ওপর যে অন্যায়-অবিচার হচ্ছে, তাঁর কাছে গোপন নয়। এবং তিনি তাদের সাহায্য করতে সক্ষম।

 

[التَّوْبَةِ: 119] (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ)

 

অর্থাৎ, হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।[সুরা তাওবা : 119]

 

হে মুসলিমগণ! অনন্তকালের দুটি স্বাদ—মিষ্টি ও তিক্ত। সময়ের দুটি দিক—কষ্ট ও স্বাচ্ছন্দ্য। প্রতিটি কষ্টের গন্তব্য সমৃদ্ধির দিকে। প্রতিটি অন্ধকারের সমাপ্তি ঘটে আলোয়। প্রতিকূলতার পরই স্বস্তি। বৃষ্টির পরই সজিবতা। সূর্য অস্ত যাওয়ার পরই উদিত হয়। উদ্যানের পাতা ঝরার পরই নতুন করে পল্লবিত হয়। সীমালঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে বিজয় এবং তাদের থেকে প্রতিশোধ নেবার সময় আল্লাহ অবশ্যই নির্ধারণ করে রেখেছেন।

 

اللهُ يُفرِج بعدَ ضيقٍ كَرْبَها *** ولعلَّها أن تَنْجَلِي ولعلَّها

إنَّ الأمورَ إذا الْتَوَتْ وتعقَّدَتْ *** نَزَلَ القضاءُ مِنَ السماءِ فحَلَّها

 

আল্লাহ প্রতিকূলতার পর কষ্ট দূর করেন, সুনিশ্চিতভাবেই তা একসময় দূরীভূত হবে।

পরিস্থিতি যখন সবদিক থেকে প্রতিকূলে, তখনই আসমান থেকে তার ফয়সালা হয়। 

 

সুতরাং হে মুসলিম! আজ্ঞাবহ হও, দলবদ্ধ হও, ঝগড়া-বিবাদ ও শত্রুতা থেকে সাবধান থাকো, তর্ক-বিতর্ক ও ভণ্ডামি থেকে দূরে থাকো। জেনে রাখো, যে স্বেচ্ছাচারিতা করবে তার মন্দই হবে, আর যে তার মন্দ বিষয়গুলো সংশোধন করবে, তার হিংসাকারী ধ্বংস হয়ে যাবে। মুমিনের সবচেয়ে শক্তিশালী ঢাল হলো কুরআন ও সুন্নাহ—যদি উম্মার সালাফের পন্থায় আঁকড়ে ধরা হয়। 

 

হে মুসলিমগণ! একমাত্র আল্লাহকে আশ্রয় করা ছাড়া কোনো কিছুই যন্ত্রণা ও ভয়কে প্রশমিত করতে পারে না। যে সর্বশক্তিমান আল্লাহর শরণাপন্ন হবে, তার দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে। অস্থিরতা ভাগ্যের লিখন বদলাতে পারে না, সুনিশ্চিত বিষয়কে টলাতে পারে না। যদি তোমাকে মৃত্যু ঘিরে ধরে এবং পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে, তবে নিজ প্রভুর কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করো। নিজের যত অভিযোগ-অনুযোগ তাঁর  কাছেই উত্থাপন করো। প্রার্থনায় তার কাছেই বিপদমুক্তির আকুতি প্রকাশ করো। দুআর চেয়ে মহৎ কিছু  নেই। দুআ ছাড়া মানুষ ডানাহীন পাখি। দুআই একমাত্র লিখন পরিবর্তন করতে পারে। যে আল্লাহর কাছে প্রত্যাশী সে নিশ্চিত প্রাপ্তির অপেক্ষায়। আর যে গায়রুল্লায় মত্ত সে সর্বদাই বঞ্চিত।

 

মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর ওপর দরুদ পাঠ করুন। যে তাঁর ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করেন।

 

হে আল্লাহ, রহমত ও পুরস্কারের আনয়নকারী, ক্ষমতা ও শাস্তির সতর্ককারী, বিচার দিবসে সুপারিশকারী, আমাদের নবি মুহাম্মাদের সাঃ প্রতি বরকত ও শান্তি বর্ষণ করুন। তাঁর পরিবার ও সঙ্গীদের সাথে আমাদের ওপরও অনুগ্রহ করুন! হে কারিম, হে ওয়াহহাব!

হে আল্লাহ, ইসলাম ও মুসলমানদের সম্মানিত করুন, শিরক ও মুশরিকদের লাঞ্ছিত করুন, দ্বীনের শত্রুদের ধ্বংস করুন এবং আমাদের দেশ সৌদি আরবসহ সকল মুসলিম রাষ্ট্রকে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র, চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত এবং বিদ্বেষীদের ঘৃণা ও হিংসা থেকে রক্ষা করুন। 

 

হে আল্লাহ, আমাদের ইমাম ও আমাদের অভিভাবক, দুই পবিত্র মসজিদের সেবককে, আপনি যা ভালোবাসেন এবং যাতে সন্তুষ্ট হন তার জন্য তাওফিক দান করুন এবং তাকে ধার্মিকতা ও তাকওয়ায় এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য দান করুন। তার উত্তরসূরীকে ইসলাম এবং মুসলমানদের কল্যাণে কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমাদের সৈন্যদের রক্ষা করুন, আমাদের সীমান্ত এবং সীমানা রক্ষা করুন।

 

হে আল্লাহ! আমাদের অসুস্থদের আরোগ্য করুন। আমাদের পীড়িতদের নিরাময় করুন। আমাদের আক্রান্তদের সুস্থ করুন এবং আমাদের মৃতদের রহমত করুন হে কারিম ও আজিম!

 

হে আল্লাহ! আমাদের গাজাবাসীর মুক্তির পথ বের করে দিন, প্রতিটি বিপর্যয় থেকে বের হয়ে আসার তাওফিক দিন, প্রতিটি যন্ত্রণা থেকে স্বস্তি দান করুন। 

 

হে আল্লাহ, আপনিই আমাদের ইলাহ, আপনিই আমাদের আশ্রয়, এবং আমরা আপনার ওপরই ভরসা করি। তাদের দুঃখ, কষ্ট ও দুর্দশাকে দূর করুন।  তাদের জীবন ও সম্মান হেফাজত করুন। আপনার শত্রু ও তাদের শত্রুদের উপর তাদেরকে বিজয় দান করুন, হে প্রার্থনার শ্রবণকারী! 

 

হে আল্লাহ! আল-আকসাকে দখলদার ইহুদিদের নোংরা হাত থেকে পবিত্র করুন। হে আল্লাহ, আমাদের দুআ কবুল করুন, আমাদের আকুতি গ্রহণ করুন, হে কারিম, আজিম ও রাহিম। 

 

ভাষান্তর : মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম

মন্তব্য (...)

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →

বিবিধ

মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ দাঃ

শাইখ মুহাম্মাদ আওয়ামা

মাওলানা ইমদাদুল হক

আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.

মাওলানা মুহাম্মদ গিয়াসুদ্দীন হুসামী

আল্লামা মনযুর নোমানী রহঃ

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

মাওলানা মাহমুদ বিন ইমরান

আল্লামা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম দাঃ

মাওলানা ইনআমুল হাসান রহ.

মাওলানা যাইনুল আবিদীন

আবদুল্লাহ আল মাসউদ

শাইখুল ইসলাম আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ.

মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

আল্লামা ইকবাল

হযরত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান

মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী

শাইখ আলী তানতাভী

মাওলানা আতাউল কারীম মাকসুদ